Header Ads

Header ADS

অত্যাচার ১


                             
                            অত্যাচার
আমরা মাদানী কাফেলা বুধবার দুপুর ১ টার পর রওনা হলাম টঙ্গী ইজতেমার মাঠে, কাজের উদ্দেশ্যে। ছফর ছিলো নদী পথে। কাঁচপুর থেকে আমাদের নদী পথের যাত্রা শুরু হল। ট্রলার ছাড়লো বিকাল ৩.০০ টার সময়। মাঝপথে আহলে হাদিসের এক মসজিদে আছর ও মাগরিব আদায় করলাম। বাদ মাগরিব আবার ছফর শুরু হল। অবশেষে আমরা রাত ৯ টার দিকে মাঠে পৌঁছলাম। মাঠে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল কাজ করার পাশাপাশি মাঠ পাহারা দেওয়া। যাতে সাদপন্থীরা ৩০/১১/২০১৮ তারিখে জোড় করতে না পারে। কারণ তারা সাদ সাহেবের অন্ধভক্ত হয়ে এমন কিছু ভুল কথা সাধারণ লোকের মাঝে প্রচার করছে, যা কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে সমর্থিত নয়। তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়, এই ছিল ওলামা ও তলাবায়ে কেরামদের কামনা। তাই ওলামা ও তলাবাগণ মাঠে কাজ করা ও মাঠ দখলে রাখা দুই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই কাজ করেছেন। মুরুব্বীগণ আমাদেরকে শান্ত থাকতে বলেছেন। আমরা শান্তই ছিলাম।
এভাবেই কাটলো বৃহস্পতি ও শুক্রবার। শুক্রবার বিকালে মাদরাসায় ফেরার কথা ছিল। আমরাও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে জানানো হল, শনিবার সাদপন্থী লোকেরা মাঠে অবস্থান করে বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা প্রচার করতে পারে। তাই আমরা উস্তাদ ও মুরুব্বীদের পরামর্শে সিদ্ধান্ত করেছিল, শনিবারেও মাঠে অবস্থান করবো। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কোনভাবেই তারা মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা যেন শান্ত থাকি কিন্তু অবশেষে এমন হল যে, প্রশাসন নামক গাদ্দার বাহিনী  যে ওলামা ও তলাবাদেরকে সাদপন্থী জঙ্গিদের হাতে তুলে দেয়। আমার চোখের সামনে যতটুকু ঘটেছে তা লিখছি। কলমের কালিতে নয়, রক্তের কালিতে। শনিবার রাত দুটা থেকে আমরা পাহারা দিচ্ছিলাম তুরাগ নদীর তীরে। একপর্যায়ে রাতের অন্ধকার কেটে উঁকি মারলো প্রভাতের আলো। আমি ছিলাম ক্ষুধার্ত তাই নাস্তা করার প্রয়োজন বোধ করলাম।
কিন্তু হঠাৎ কামারপাড়া ব্রিজের দিকে তাকিয়ে দেখি সাদপন্থী লোকেরা আসছে শান্তভাবে। আসার পর তারা রাস্তার পাশে উঁচু মাটির টিলাতে অবস্থান করলো। একটু পর দেখতে পেলাম একজন লোক হ্যান্ডমাইক নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তৃতা করছে। সে বলছে- আমাদেরকে ভিতরে প্রবেশ করাবেন কে? শ্রোতারা বলছে আল্লাহ। ওদেরকে বের করবেন কে? শ্রোতারা বলছে, আল্লাহ। একটু পরেই তারা বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করলো। আমরা তখনও নিশ্চুপ। কারণ আমাদের হাতে কোন কিছুই ছিল না। যখন দেখলাম আমাদের সাথীদের ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, কারো মাথা ফেটে যাচ্ছে, কারো পা, কারো হাত, কারো বুকে ইট পড়ার কারণে যখম হচ্ছে। তখন আমরা আত্মরক্ষার জন্য তাদের নিক্ষেপকৃত ইট-পাটকেলগুলোই উল্টো তাদের দিকে ছুড়তে থাকি। কিন্তু আমাদের অবস্থান নিচু জায়গায় হওয়ার কারণে খুব অল্প সংখ্যক ইট তাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। তারপর তারা টিনের বেড়া ভেঙ্গে মাঠে প্রবেশ করে এবং লাঠি দিয়ে আমাদের আঘাত করতে থাকে। আমরা আত্মরক্ষার জন্য পালটা আক্রমণ করি। যখন তারা আক্রমণ করেছিল তখন পুলিশ তাকিয়ে দেখছিল পরবর্তীতে আমরা যখন তাদেরকে আত্মরক্ষার জন্য ধাওয়া ও পাল্টা আক্রমণ করি  তখন পুলিশ আমাদের লাঠিচার্জ করে এবং গুলি ছুঁড়ে। প্রমাণস্বরূপ দুই জনের কথা লিখলাম। ইব্রাহীম (শরহে বেকায়া) তার হাতে গুলি লেগেছে। মাসুম (শরহে বেকায়া) তার ঘাড়ে ফাটা বাঁশ দিয়ে আঘাত করার কারণে ফেঁড়ে গেছে।

এক পর্যায়ে পরিবেশ কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হতেই পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি; পুরো মাঠ তারা দখল করে নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ লোকের হাতেই ছিলো লাঠি। এখন তারা যাকে পাচ্ছে তাকেই পিটাচ্ছে। অবশেষে আমরা শত্রুদলের মাঝে পড়লাম। যার কারণে তারা আমাদেরকে ব্যাপকভাবে মারধর করল, যা ছিলো শারীরিক নির্যাতন। মানসিকভাবেও তারা নির্যাতন করেছিল- যেমন তারা বলছিল বল, সাদ আমির। আরও বলছিল তোরা ইলম শিখেছিস কিন্তু ঈমান শিখতে পারিসনি। আবার আমাদের অনেক সাথীকে তারা পিটিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছে। এসব নির্যাতনের বিনিময়ে আমরা বলবো, আল্লাহ যেন তাদেরকে হেদায়াত দান করেন।


No comments

Powered by Blogger.