Header Ads

Header ADS

শাইখুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া রহ.



গত ২ই রবিউল আওয়াল ১৪৪০ হি. সনে আমাদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে আপন প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে নশ্বর এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন আমাদের জামিয়ার সুনামধন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া রহ. । শায়েখের হঠাৎ করে চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য ছিল বড়ই বেদনাদায়ক। আজ শায়েখের অন্তিম মুহূর্তের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কিছু কথা তুলে ধরছি।
মাগরিবের জামাতের পর সুন্নতের কিছুক্ষণ পূর্বে বাম দিকে তাকিয়ে দেখি হযরত রহ. হাঁটতে পারছেন না। শায়েখের খাদেম তাঁর হাত ধরে আছে। হঠাৎ করে হুজুর পরে যাওয়ার উপক্রম হলো। তাই আমি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে শায়েখের হাতখানা ধরলাম। শায়েখের খাদেম আর আমি, দুজন মিলে ধরাধরি করে হুুজরকে তাঁর কামরায় নিয়ে গেলাম। হুজুর রহ. বললেন, আমাকে চেয়ারে বসতে দাও। তাই আমরা উনাকে চেয়ারে বসালাম।
হযরত বসামাত্রই বলে উঠলেন তাড়াতাড়ি জায়নামাজ বিছাও। খাদেমকে বললেন ইমামতি করার জন্য। কিন্তু সে সময় হুজুরের খাদেম তাঁর মাথা ধরে আছেন আর আমি হুজুরকে বাতাস করছিলাম। তাই আমরা কেউ হুজুরকে ছেড়ে উঠতে পারছিলাম না। তখন হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে আমার নাম এবং জামাতের নাম জিজ্ঞাসা করলেন। আমি উত্তর দিলাম। তারপর হুজুর উপরের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ আওয়াজে যিকির শুরু করলেন। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে যিকিরের আওয়াজ ততই বেড়ে চলছে। কি যে মধুর ছিল সে আওয়াজ; তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। জীবনে কখনো এত করুণ কণ্ঠের হৃদয়বিদারক যিকিরের আওয়াজ আমি শুনিনি। ততক্ষণে গ-দ্বয় বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে আমার। আর হুজুরের খাদেম সেই পূর্ব থেকেই অবিরাম কেঁদেই চলছে। তারপর আমরা দেখলাম, হুজুর ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করলেন। আর মাথাটাকে ডানে বামে এলিয়ে দিচ্ছিলেন। তখনিই আমি পাখাটি রেখে শায়েখের হাত ধরলাম। আর খাদেম ভাই হুজুরের মাথা ধরে আছেন। হঠাৎ করে হুজুর ডানদিকে মাথাটাকে এলিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। হুজুরের খাদেম বললেন হুজুরকে শোয়ানোর ব্যবস্থা কর। আমি রুম থেকে বের হয়ে কয়েকজন বড় ছাত্র এবং উস্তাদকে ডাকলাম। সকলে ধরাধরি করে হুজুরকে উত্তর দিকে মাথা এবং দক্ষিণ দিকে পা করে শোয়ালাম। ইতিমধ্যেই উস্তাদগণ আসতে শুরু করলেন এবং কয়েকজন ডাক্তারও এসে উপস্থিত হলেন। ডাক্তারগণ তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করে বলে উঠলেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কামরার মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গেল। ছাত্রদের চিৎকার আর খাদেমের কান্নার আওয়াজে মুহূর্তের মধ্যেই পরিবেশটা এক বিষাদময় অবস্থা ধারণ করলো। স্ত্রী, তিন কন্যা, দুই পুত্র এবং হাজার হাজার আলেম, ছাত্র-শিক্ষক, মুহিব্বীন-মতাআল্লিকীনকে এতিম করে পাড়ি জমালেন প্রিয় প্রভুর সান্নিধ্যে।
হাদীসের দরসে তাঁর মধুময় কন্ঠস্বর আর ধ্বনিত হবে না। তাকে কখনো আর আমাদের মাঝে ফিরে পাবো না। শুধু পাবো তাঁর রেখে যাওয়া সমুজ্জ্বল অবদানগুলো। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কবরকে নূরে নূরান্বিত করে দিন। তাঁর মর্তবাকে আরো বুলন্দ করে দিন। তাঁর মাকামকে আরো উঁচু করে দিন। আমীন


No comments

Powered by Blogger.